Search

Monday, October 25, 2021

আমানতের গুরুত্ব ও খেয়ানতের ভয়াবহতা, মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

আমানতের গুরুত্ব ও খেয়ানতের ভয়াবহতা

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ


আমানতের গুরুত্ব ও খেয়ানতের ভয়াবহতা

মুমিন বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সে আমানতদার হয়। মুমিনের কাছে জীবনের সর্বাপেক্ষা সম্পদ হলো আমানতদারী। আমানতদারী একজন মুমিনের নিদর্শন। এ কারণে মুমিন নিজের জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করে হলেও আমানতদারী রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়। আমানতদারীর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন, আমানত তার হকদারকে প্রত্যাবর্তন করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দিচ্ছেন তা কত উত্কৃষ্ট আল্লাহ সর্বশ্রোতা আল্লাহ সর্বস্রষ্টা।’ (সূরা নিসা : ৪৮)। উল্লিখিত আয়াতে আমানতের বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে একদিকে যেমন হকদারের হক প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে বিচারকের বিচারকার্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করতে বলা হয়েছে। এ থেকে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়, আমানতদারী শুধু হকদারকে হক বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করাটাও আমানতদারী। আর এই দায়িত্ব অর্পণ যেমনিভাবে বান্দার পক্ষ থেকে অন্য বান্দার ওপর হতে পারে আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতিও হতে পারে। যেমন আল্লাহ মানুষকে সুস্থ বিবেক, হাত, পা, চক্ষুসহ যত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহারেরও নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ-প্রদত্ত এই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশের বাইরে, পছন্দের বাইরে কোনোভাবে ব্যবহার করে তবে সে কিয়ামতের দিন খেয়ানতকারীদের দলভুক্ত হয়ে উঠবে। আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘চোখসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপনে রাখে তা তিনি (আল্লাহ জানেন)।’ (সূরা মুমিন : ১৯)। ওই আয়াতে চোখের অপব্যবহারকে খেয়ানত বলা হয়েছে। চোখের দ্বারা খেয়ানত বলতে চোখ দ্বারা এমন সব কিছু দেখা যা দেখলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন সেটাই চোখের খেয়ানত, অনুরূপভাবে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিষয়টাও একইভাবে প্রমাণিত হলো। যেমন হাত দিয়ে কারও প্রতি জুলুম করা, চুরি করা, ডাকাতি করা ইত্যাদি হাতের খেয়ানত। মুখ দিয়ে কাউকে গালি দেওয়া, মিথ্যা বলা, গিবত করা ইত্যাদি মুখের খেয়ানত। আল্লাহর পছন্দের বাইরে কোনো নাফরমানির কাজে ব্যয় করাটা সময়ের খেয়ানত। আবার কেউ যদি কারও সঙ্গে কোনো নির্ধারিত সময়ের জন্য কারও সঙ্গে কোনো চাকরিতে চুক্তিবদ্ধ হয় আর ওই চাকরিজীবী যদি ওই চুক্তিবদ্ধ সময়ের মাঝে কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি না নিয়ে অন্য কোথাও সময় ব্যয় করে তাও হবে বড় ধরনের শুধু খেয়ানতই নয় বরং ধোঁকাবাজির শামিল। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলা করা, ধোঁকা দেওয়া, সময়ের খেয়ানত করার গুনায় লিপ্ত হবে।

সুতরাং আমাদের সব ধরনের খেয়ানত বর্জন করে মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আমানতদারীর বিশেষ গুণ অর্জন করতে হবে। আর তখনই আমরা নিজেদের মুমিন পরিচয় দিতে পারব। আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন, রসুলে কারিম (সা.)-এর কোনো বক্তৃতা এমন ছিল না যেখানে তিনি এ কথা না বলেছেন যে যার চরিত্রে আমানতদারী নেই তার ইমান নেই। আর যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার দীন নেই। (মুসনাদে আহমাদ)।  অন্য হাদিসে রসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তার খেয়ানত করে। (বুখারি, মুসলিম)। আসুন আমরা সব ধরনের আমানত রক্ষা করি, খেয়ানতের মহামারী থেকে দূরে থাকি। আল্লাহ মেহেরবানি করে আমাদের সব ক্ষেত্রে আমানতদারী রক্ষা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 


No comments:

Post a Comment

Adjective. admission & job question about Adjective . BCS, job, Admission. Mastars/ expert guide.

  1.        The function of an adjective is to modify a – a)       Noun                                                   b) pronoun      ...

popular posts